কি হতো যদি সূর্য অদৃশ্য হয়ে যেত?

পৃথিবী সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। এটা আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য সূর্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাবেই সৌরজগতের সকল গ্রহ একটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে বিচরণ করছে। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কি হতো যদি সূর্য হটাৎ করে উধাও হয়ে যেত?
সূর্য পৃথিবীর তুলনায় ৩ লক্ষ্য ৩৩ হাজার গুণ বড় এবং এটি প্রতি সেকেন্ডে ১০০ বিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমার সমপরিমাণ শক্তি প্রতিনিয়ত ত‍্যাগ করে যাচ্ছে। সূর্যের মাঝে এখনোও এত বেশি শক্তি আছে যে তা আরো ৫ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে সূর্যের উদাও হয়ে যাওয়া বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ,কিন্তু নতুন কিছু শেখার জন্য একটা চিন্তালব্দ পরীক্ষা করতে দোষ কোথায়? তাহলে চলুন বিজ্ঞানের নানান সূত্রের উপর ভিত্তি করে আমরা একটা চিন্তালব্দ পরীক্ষা করে দেখি যে আসলেই সূর্য উদাও হয়ে গেলে পৃথিবী এবং সৌরজগতের উপর কি প্রভাব পড়ত।
সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে ফলে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় ৮ মিনিট সময় লাগে। এইজন্য সূর্য উধাও হয়ে গেলেও ৮ মিনিট ধরে আমরা বুঝতেই পারব না যে সূর্য তার নিজের জায়গায় নেই। সূর্য অদৃশ্য হওয়ার পর ও ৮ মিনিট ধরে আমরা সূর্যকে তার আগের জায়গায়তেই দেখব। ৮ মিনিট শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ সূর্যের আলোর সর্বশেষ রস্মিটি পৃথিবীতে পৌঁছানোর পর আমরা বুঝতে পারব যে সূর্য অদৃশ্য হয়ে গেছে।
এমনটা নয় যে সূর্য উধাও হওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হবে । যদিও আমরা জানি যে সূর্যের মহাকর্ষ বলের কারণেই পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে । তাহলে আপাত দৃষ্টিতে আমাদের এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে সূর্য উধাও হওয়ার সাথে সাথেই মহাকর্ষ বল শেষ হয়ে যাবে এবং পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হবে। কিন্তু আইনস্টাইন তার আপেক্ষিক তত্ত্ব তে প্রমাণ করেছেন যে মহাবিশ্বে আলোর গতি সর্বোচ্চ এবং ধ্রুব। তাই আলোর সর্বশেষ কিরণ আসতে যে সময় লাগবে সে সময় পর্যন্ত মহাকর্ষ বলও বজায় থাকবে। অর্থাৎ সূর্য অদৃশ্য হওয়ার ৮ মিনিট পরই পৃথিবী কক্ষপথ থেকে সরে গিয়ে একটা সরল লেখার সামনের দিকে এগোতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মহাজাগতিক কোনো কিছুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বা অন্য কোন নক্ষত্রের প্রভাবে না আসছে। অন্যান্য গ্রহের ক্ষেতেও এখই ঘটনা ঘটবে।
সূর্য উধাও হওয়ার প্রভাব আমরা প্রথমে আলোর অনুপস্থিতি থেকেই বুঝতে পারব। পৃথিবীর অভিকর্ষের কারণে আমরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হবো না।সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে না পারায় চাঁদকে আর খালি চোখে দেখা যাবে না। পৃথিবীতে সূর্যের আলো না থাকলেও বৈদ্যুতিক আলো তখনও থাকবে এবং আকাশে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি তারকা নজরে পড়বে।
সূর্যের আলো না পাওয়ায় গাছপালা সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ করে দেবে তখন গাছ থেকে আর কোন অক্সিজেন পাওয়া যাবে না। অনেক গাছ পালাই মারা যেতে থাকবে। কিন্তু বড় বড় গাছ গুলো তখনও আত্মরক্ষা করতে পারবে। গাছ থেকে অক্সিজেন না পাওয়ার ফলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যা অন্য সকল প্রাণীর অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিবে। কিন্তু আসলে এমনটা নয়। পৃথিবীতে তখনও এত অক্সিজেন থাকবে যে সকল জীবের এক হাজার বছর লাগবে সেই অক্সিজেন শেষ করতে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে সূর্য উধাও হলেও অক্সিজেন ও আলো তেমন একটা সমস্যা করবে না। তখন সবচে বেশি সমস্যা হবে তাপমাত্রা নিয়ে। সূর্য থেকে তাপ ও আলো না আসার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে করতে থাকবে এবং কিছু সপ্তাহের মধ্যেই তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে। তখন পৃথিবীর সবকিছু জমতে শুরু করবে। সমুদ্র পৃষ্ঠ বরফের আস্তরণে ঢেকে যাবে। কিন্তু সমুদ্রের গভীরে ও সক্রিয় আগ্নে়গিরির পাশে কিছুটা উষ্ণ থাকবে। কারণ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপ সমুদ্রের গভীরের জলকে বরফ হওয়া থেকে বাঁচাবে।
এই উষ্ণ জায়গা ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো প্রাণী আত্মরক্ষা করতে পারবে না। এর পরে এমন একটা সময় আসবে যখন পৃথিবীর তাপমাত্রা কমতে কমতে সর্বনিম্ন -১৮০° সেলসিয়াসে পৌঁছাবে। তখন শুধু মাত্র কিছু কিছু অনুবিক্ষণিক জীব ই বেঁচে থাকবে এবং পুরো পৃথিবী প্রাণ শূন্য হয়ে যাবে।
আজকে এই পর্যন্তই। আমরা জানি সূর্য কখনোই অদৃশ্য হয়ে যাবে না। তার পরেও আমরা চিন্তালব্দ একটা পরীক্ষা করে বেশ কিছু রোমাঞ্চকর তথ্য জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments