দশম মাত্রায় যাত্রা


No automatic alt text available.

প্রকৃতিকে জানার জন্য আমরা আশ্রয় নেই পদার্থবিজ্ঞানের। আর সেই পদার্থবিজ্ঞান প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানে এক নব্য মাত্রা নিয়ে এসেছে স্ট্রিং থিওরী। স্ট্রিং থিওরীর মতে আমাদের মহাবিশ্বে মোট মাত্রা ১০ টি ( মতান্তরে ১১ টি)। এতোগুলো মাত্রার কাজ কি ? আমরা তো ত্রিমাত্রিক প্রাণী। কি হতো যদি আমরা আরও উপরের মাত্রাগুলোতে প্রবেশ করতাম ? আজকে আমি একটু বলার চেষ্টা করবো, আমরা যদি ১০ম মাত্রিক প্রাণী হতাম, তাহলে কি হতো ? প্রথমে আমরা শূন্য মাত্রা থেকে শুরু করে এক এক করে সামনে আগাই।
শূণ্য মাত্রাঃ আপনি যদি শূণ্য মাত্রার প্রাণী হতেন, তাহলে আপনাকেও বিন্দুর মতো একই যায়গায় থাকতে হতো। এমনকি আপনার চোখে এই মহাবিশ্বটাও হয়ে যেত একমাত্রিক। কখনও কখনও দেখতেন, সেই একক মাত্রায় কোন বস্তু প্রবেশ করেছে, আবার পরমুহুর্তেই নাই হয়ে গেছে। আপনি এসব ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুজে পেতেন না। হয়তো মনে করতেন এটা কোন ভূত পেত্নীর কাজ।
প্রথম মাত্রাঃ প্রথম মাত্রার প্রাণী হলে আপনি শুধু কোন একটি সরলরেখা বরাবর দেখতে ও চলতে পারবেন। আপনার জগত হয়ে যাবে ওই সরলরেখার মধ্যে। আপনার জগতের বিজ্ঞানীরা তত্ত্ব দিবে যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব সরলরৈখিক। বিগব্যাং এর পর কোন এক কারনে মহাবিশ্বের সকল পদার্থ সরল রেখাকেই বেছে নিয়েছে। আপনিও কিন্তু হুট হাট করে বিভিন্ন বস্তুকে আপনার জগতে আসতে এবং উধাও হয়ে যেতে দেখতেন।
দ্বিতীয় মাত্রাঃ অসীম সংখ্যক একমাত্রিক সরলরেখা পাশাপাশি স্থাপিত হয়ে একটি দ্বিমাত্রিক সমতল তৈরী হয়। দ্বিমাত্রার প্রাণী হলে আপনার কাছে মহাবিশ্ব হবে দ্বিমাত্রিক। আর মজার ব্যাপার হলো, আপনি তখন চাইলেই শূণ্য ও প্রথম মাত্রার প্রাণীকে ভয় দেখাতে পারবেন। আপনি যখন প্রথম মাত্রার প্রাণীর অবস্থিত রেখা বা শূণ্য মাত্রার প্রাণীর অবস্থিত বিন্দুর উপর দাঁড়াবেন, তখন তারা আপনাকে দেখতে পারবে। কিন্তু যদি একটু সরে যান তখন আর আপনাকে দেখতে পারবেনা তারা।
তৃতীয় মাত্রাঃ ত্রিমাত্রিক প্রাণী সম্পর্কে শুধু একটি কথা বলাই যথেষ্ট। মানুষ ত্রিমাত্রিক প্রাণী। আমরা ত্রিমাত্রিক প্রাণী বলেই আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে বুঝতে পারিনা। কারন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাজকর্ম আরও বেশী মাত্রায় ঘটে থাকে।
প্রথম চারটি মাত্রায় ঘনকের আকার কেমন হবে তার একটি চিত্র
চতুর্থ মাত্রাঃ চতুর্থ মাত্রার ঘনক তৈরী করতে অসীম সংখ্যক ত্রিমাত্রিক ঘনক পাশাপাশি যুক্ত করতে হবে। চতুর্মাত্রিক পদার্থ সময়কে অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ আপনি যদি চতুর্মাত্রিক প্রাণী হোন, তাহলে আপনি চাইলেই অতীতে অথবা ভবিষ্যতে যেতে পারবেন। মানে সময় ভ্রমন সম্ভব হবে। এভাবে আপনি চাইলেই অতীতে গিয়ে কোন কিছু পরিবর্তন করে বর্তমানকে পরিবর্তন করতে পারবেন।
পঞ্চম মাত্রাঃ পঞ্চম মাত্রায় গেলে আপনি আপনার সমান্তরাল ভবিষ্যতগুলোতে যেতে পারবেন। মানে ধরুন আপনার এখন মনে হলো যে, এখন আপনি প্রিয়ার হাতে হাত রেখে সমুদ্রে জ্যোৎস্না স্নান করবেন, তাহলে এখন আপনি মূহুর্তের মধ্যেই দেখবেন আপনি প্রিয়াকে নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে আছেন। তার জন্যে অতীতকে যেভাবে পরিবর্তন করা দরকার হবে, অতীত নিজেই সেভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ব্যাপারটা খুবই মজার :)। আরেকটা কথা বলে রাখি। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাজ হচ্ছে পঞ্চম মাত্রায়। যে কণা পঞ্চম মাত্রার উপর যতো বেশি দখল রাখবে, সেই কণা ততো বেশী তরঙ্গধর্ম প্রদর্শন করবে। ফোটন কণা পঞ্চম মাত্রায় থাকে বলেই একটি ফোটন কণা একই সময়ে ভিন্ন যায়গায় অবস্থান করতে পারে।
ষষ্ঠ মাত্রাঃ ষষ্ঠ মাত্রায় আপনি বিগব্যাং এর পর এই মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে চলে যেতে পারবেন। আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, এই কাজ আপনি চতুর্থ মাত্রাতেই করতে পারবেন। হুদাই ষষ্ঠ মাত্রাতে যাবার কি দরকার? আসলে আপনি চতুর্থ মাত্রা ব্যাবহার করে অতীতে যেতে পারবেন, কিন্তু নিজের জন্মের আগে যেতে পারবেন না। নিজের জন্মের আগে যেতে হলে আপনাকে ষষ্ঠ মাত্রাতেই যেতে হবে।
সপ্তম মাত্রাঃ সপ্তম মাত্রার প্রাণী হলে আপনি আমাদের মহাবিশ্ব এমন না হয়ে অন্য যেমন হতে পারতো সেই সকল মহাবিশ্বে যেতে পারবেন।
অষ্টম মাত্রাঃ অষ্টম মাত্রায় গেলে আপনি যেতে পারতেন অন্য যে কোন সমান্তরাল মহাবিশ্বে।
নবম মাত্রাঃ নবম মাত্রায় গেলে আপনি যেকোন মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে চলে যেতে পারবেন। তবে অষ্টম মাত্রা ও ষষ্ঠ মাত্রা ব্যাবহার করেও কাজটি আপনি করতে পারতেন। অষ্টম মাত্রা ব্যাবহার করে অন্য কোন মহাবিশ্বে এবং পরে ষষ্ঠ মাত্রা ব্যাবহার করে সেই মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এটি একটু সময় সাপেক্ষ। নবম মাত্রা দিয়ে আপনি মুহুর্তেই যে কোন মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে যেতে পারবেন।
দশম মাত্রাঃ দশম মাত্রার প্রাণির কাছে আমাদের মহাবিশ্ব সহ সকল মহাবিশ্বের সকল সময়ের এবং সম্ভাব্য সকল অবস্থা হলো একটি বিন্দুর মতো। আপনি দশম মাত্রা ব্যাবহার করতে পারলে আপনার অন্য কোন মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে যে কোন স্মভাব্য অবস্থায় যেতে আর কোন বেগ পেতে হবে না।
এছাড়াও আরেকটি মাত্রার কথা অনেক বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন। ১১তম মাত্রা। যা আরও একটু জটিল। এই মাত্রা সম্পর্কে আমার নিজেরই ধারণা নেই। জানতে পারলে পরে আপনাদেরকে জানাবো।

Post a Comment

0 Comments