আপেক্ষিকতা ও সময় ভ্রমন

মাইকেলসন ও মর্লির পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিলো আসলে আমরা যেই বেগেই চলি না কেন, আমাদের সাপেক্ষে আলোর বেগ সর্বদা একই হবে এবং তা হবে ৩ লক্ষ কিমি/সে। মাইকেলসন মর্লির পরীক্ষা সম্পর্কে পূর্বের একটি পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। এজন্য এটা সম্পর্কে তেমন কিছু বললাম না। আইন্সটাইন তার আপেক্ষিকতায় এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, এমন হবার কারন আমাদের জন্য ততোক্ষন এক সেকেন্ড হবে না যতোক্ষন না পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকা আলোক রশ্মি আমাদের অতিক্রম করে ৩ লক্ষ কিমি পার না হয়ে যাচ্ছে।
মূলত সময় ভ্রমনের ধারণা আসে এখান থেকেই। ধরুন আপনি যাচ্ছেন একটি রকেটে করে। এখন আপনার সময় ধীর হয়ে গেলো, কারন আলোর আপনাকে অতিক্রম করে ৩ লক্ষ কিমি পার হতে এক সেকেন্ডের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। এটাই সময় ধীর হয়ে যাবার মূল কারন। মানে আমরা এইটুকু বুঝতে পারছি যে, আলোর বেগের সাথে সময়ের একটি সম্পর্ক আছে।
এখন ধরি আমি আলোর বেগে ছুটে চলছি একটি রকেটে করে। তাহলে আলোর কতোটুকু সময় লাগবে আমাকে অতিক্রম করে ৩ লক্ষ কিমি যেতে? আমি যদি রকেটকে একই বেগে চালাতেই থাকি, তবে আলোর কণা কখনই আমাকে অতিক্রম করে যেতে পারবে না। এর মানে হচ্ছে আমার আর কখনো এক সেনেন্ডহবে না। আমার সময় হয়ে যাবে স্থির। মানে আলোর বেগে আপনি কোথাও থেকে ঘুরে আআবার ফিরে এলে পৃথিবীতে কতোক্ষন পার হয়ে যাবে সেটা বলা যাবে না। গাণীতিকভাবে উত্তরটা আসে অসীম।
তাহলে কি হবে যদি আলোর চেয়েও বেশি বেগে ভ্রমন করতে পারি? যদিও এটা সম্ভব না, তার কারন কোন বস্তুর বেগ বাড়াতে হলে তার উপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করতে হবে। আর আলোর বেগে কোন বস্তুকে নিক্ষেপ করতে হলে সেই বলের মান হতে হবে অসীম। ফলে এটুকু বুঝতে পারছি যে আলোর বেগেই আসলে কোন বস্তুকে নিক্ষেপ করা সম্ভব না, আর আলোর বেগের চেয়েও বেশি বেগ তো আরও অসম্ভব একটই ব্যাপার। কিন্তু কল্পনা করে নিতে তো আর কোন সমস্যা নেই। আলোর থেকে বেশি বেগে গেলে যেই আলোর কণা আমাদের সাথে যাত্রা শুরু করেছে, সে কখনই আমাদের ধরতে পারবে না। ক্রমাগত আলোর ওই কণা আমাদের থেকে পিছিয়ে যেতে থাকবে। আলোর কণা আমাদেরকে অতিক্রম করে ৩ লক্ষ কিমি সামনে গেলে সেটাকে আমরা যদি ১ সেকেন্ড বলি, তাহলে আলোর কণা আমাদের সাথে যাত্রা শুরু করে আমাদের থেকে ৩ লক্ষ কিমি পিছিয়ে পড়লে সেটাকে আমাদের অবশ্যই -১ সেকেন্ড বলতে হবে। তার মানে আমি যদি আলোর চেয়েও বেশি বেগে যাই, তবে আমার সময় উল্টা দিকে ভ্রমন করা শুরু করবে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই মূলত বিজ্ঞানীরা সময় ভ্রমনের কথা বলে।

Post a Comment

0 Comments