থিওরী অফ রিলেটিভিটি : একটি গুটিবাজ ঘড়ি ও ধড়িবাজ মিটার-স্কেলের ইনফাইনাইট (পর্ব-১)

উপাখ্যান : একটি মনবিষ্ফোরক ইউনিভার্সের ভায়োলিন-স্ট্রিং এর সুর-লহরী !!!
- আচ্ছা, থিওরী অফ রিলেটিভিটি যেন কী?
- E = mc² !!! এটাও জানো না !?
- আরে ধুর ! থিওরী অফ রিলেটিভিটি হইল, ঐ যে সব কিছু আপেক্ষিক!
- মানে !
- আরে, চুলার সামনে দাঁড়ানো আর কোন সুন্দরীর সামনে দাঁড়ানো যেমন এক না, সেরকম!!
- ওয়াও *_*
আশা করা যায় আমাদের অবস্থা এনাদের মতন না নিশ্চিত ভাবেই আমরা থিওরী অফ রিলেটিভিটি বলতে E = mc² মনে করি না! তাহলে আমরা রিলেটিভিটি বলতে কী বুঝি!?
থিওরী অফ রিলেটিভিটি বলতে আমরা বুঝি যে, আসলে প্রায় সব কিছুই আপেক্ষিক ( তবে ঐ দুই বন্ধুর মত করে না)। আপেক্ষিকতা বলে, একেক জনের কাছে তার রেফারেন্স ফ্রেমের বাইরের জগৎ একেক রকম মনে হবে। এর মানে হচ্ছে যে আলাদা আলাদা Reference frame { প্রসঙ্গ কাঠামো } থেকে বাইরের পরিমাপ কৃত বাইরের ডাটা যেমন: দৈর্ঘ্য,গতি-বেগ, ভরবেগ, সময় একেক রকম হবে ! কিন্তু তারা প্রত্যেকেই হবে ঐ ফ্রেমের জন্য সঠিক ! যেমন : গতিশীল কোন গাড়ীতে থাকা অবস্থায় আর আপাত স্থির অবস্থায় থেকে উড়ন্ত পাখির বেগ মাপলে এদের মাঝে পার্থক্য দেখা যাবে! এটা বোঝা সহজ, কেননা গাড়ির গতির কারণে পাখিদের কে আরো দ্রুত বা আরো ধীরে উড়তে দেখা যাবে। মানে একই জিনিসের মান আমরা দুই রকম পেয়ে যাচ্ছি !
কিন্তু উপরে উল্লিখিত ডাটা গুলির মধ্যে "সময়" জিনিসটাও রয়েছে ! এর দ্বারা বোঝা যায় যে, Time is relative too ! মানে একেক রেফারেন্স ফ্রেম এ সময় একেক ভাবে কাজ করে ! কোথাও সময় দ্রুত যায়, কোথাও অপেক্ষাকৃত আস্তে !!!
তবে ভর, চার্জ আপেক্ষিক নয়!
আমরা সবাই ই মোটামুটি স্পেশাল রিলেটিভিটি পড়েছি। কিন্তু ফিল করেছি কী? ভেবে দেখেছি কী, যে কেন এই সময় ব্যাটাও কোথাও ধীরে চলতে পারে? এ জগৎের এত ঠ্যাকা কিসের যে আলোর বেগ কে ধ্রুব রাখা লাগবে? Why can't we gain the speed of light if we have mass?
তাহলে শুরু করা যাক এই মনবিষ্ফোরক ( Mindblowing ) মহাবিশ্ব ফিল করার এক অসাধারণ যাত্রা !
রিলেটিভিটি পড়া শুরু করানোর আগে মোটামুটি সবখানেই দুটি ইউনিভার্সাল সূত্র এর কথা দেয়া থাকে। সূত্র দুটি এরকম -
১] যে কোন রেফারেন্স ফ্রেম ও মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র গুলো এক।
২] যে কোন রেফারেন্স ফ্রেম থেকে আলোর বেগ ধ্রুবক।
প্রথম সূত্র টা ডাল-ভাত। পড়েই আমরা বুঝতে পারি, সূত্র মানে সূত্র , যেখানেই খাটাই, খেটেই ছাড়বে। মানে সবখান থেকেই এগুলো কার্যকর হবে !
দ্বিতীয় সূত্র টা দেখতে খুবই নিরীহ মনে হলেও, এটা এ মহাবিশ্বের অপার সৌন্দর্য প্রকাশ করে ! এটি এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি ইউনিক ধর্ম প্রকাশ করে ! আইন্সটাইন, আপনাকে সালাম ! আপনি যদি এই জগৎকে ফিল না করে এই মহাজাগতিক বৈশিষ্ট্য উন্মোচন না করে আমাদের তাক না লাগাতেন, তা হলে যে কী হত ! একটু পরেই আমরা দেখতে পাব মহাবিশ্ব তার এ ইউনিক ধর্ম রক্ষা করতে কত রকম তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলছে!
কাল দীর্ঘায়ন ও দৈর্ঘ্য সংকোচন : গুটিবাজ ঘড়ি ও ধড়িবাজ মিটার-স্কেলের "ইনফাইনাইট" উপাখ্যান
ফিজিক্স ফিল করতে হলে কল্পনা করা আবশ্যক ! আইন্সটাইন মহাশয় এঁর অমর বাণী, " Imagination is more important than knowledge" ! তো তাঁর এ বাণী আত্বস্থ করে আসুন মোরা এগিয়ে যাই,
মনে করুন, আপনি একটা বাসে করে যাচ্ছেন। বাসটার স্পেশালিটি, এইটা যেকোন স্পিডে চলতে পারে [ কল্পনা করতে তো অসুবিধা নাই আর এটা সমবেগ বজায় রাখে। ধরুন, বাসটি একটা ওয়ান ওয়ে হাই ওয়ে ধরে চলছে, এ মুহূর্তে আপনার প্রকৃত বেগ 5 m/s। একটু পর দেখলেন, আপনার পাশেই আরেকটা বাস একই দিকে আপনার পাশে দিয়ে চলছে। তাদের স্পিডোমিটারে লেখা 6 m/s। আপনার কিছু টা সন্দেহ হওয়ায় আপনার রাডার গান দিয়ে পাশের বাস টার গতি মাপলেন। গতি কত দেখাবে?
বুঝতেই পারছেন এখানে আপেক্ষিক বেগ এর মান বের হবে, মান দেখাবে মাত্র 1 m/s, কেননা 6-5 = 1 ! আবার যদি, দুই বেগইই সমান হত, তাহলে দুই বাসের যাত্রীরা সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করবে, একে অপরকে স্থির দেখবে, একজনের সাপেক্ষে আরেকজনের অবস্থানের পরিবর্তন হবেই না!
তো, একই দিকে চলার ক্ষেত্রে আমরা পেলাম নিজের বাসের প্রকৃত বেগ ( রাস্তার সাপেক্ষে) A ও অপর বাসের প্রকৃত বেগ B হলে অপর বাসের আপেক্ষিক বেগ = B - A
আচ্ছা, যদি এমন হত যে, পাশের বাসটা আলোর গতিতে চলছে? অথবা ধরে নিলাম, পাশে কোন বাস না, বরং একই পথে চলছে আলো খোদ নিজে?
ধরলাম আমরা এখনো আইন্সটাইনিয়ান মেকানিক্স জানি না, তো আগে যেমন আমাদের সাপেক্ষে বাসের বেগ বের করে ছিলাম সেই একই ফর্মূলা apply করি,
আমাদের কাছে আলোর আপেক্ষিক বেগ = c - 5 = 299792453 m/s।
কিন্তু , একি! এতো অধর্ম হয়ে গেল ! এ তো মহাপাপ করে ফেললাম ! মহাবিশ্বের ধর্ম কী পড়েছিলাম ? সব রেফারেন্স ফ্রেম থেকে আলোর বেগতো একই হওয়া উচিত! কিন্তু এখানে অনর্থ ঘটে গেল, আইন্সটাইন কাক্কু ভুল করে ফেলল নাকি আবার?
নাহ, আইন্সটাইন ভূল করেন নি! এখানেই আসল খেলা শুরু!
তো এ মহাবিশ্ব চিন্তায় পড়ে গেল, এখানে নিজের ধর্ম নিয়েই আমরা টানাটানি শুরু করে দিসি কিনা? এই আসন্ন মহাসংকট কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে, সে ঐ রেফারেন্স ফ্রেমের সময়ের প্রবাহকেই ধীর করে দেয়!!!
ব্যাপারটা এরকম, কোন রেফারেন্স ফ্রেমের টাইম স্লো করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, বাইরের কোন ফ্রেমে যতক্ষণে ১ সেকেন্ড কাটবে, ততক্ষণ ভেতরে কাটবে ০.৫ সেকেন্ড!! আবার ভেতরে ১ সেকেন্ড কাটতে বাইরের ফ্রেমে কেটে যেতে পারে ১.৭৭ সেকেন্ড!! তার মানে আপনি দেখবেন গতিশীল কোনবস্তুর ভেতর সবকিছু কেমন যেন স্লো হয়ে পড়ছে।
আচ্ছা, ভালো কথা, বুঝলাম না হয় গতিশীল হলে টাইম স্লো হয়ে যায়, বাট এতে লাভ টা কী হইল?
লাভ হলো এই যে, আপনার টাইম স্লো হয়ে গিয়েছে। আপনি গতিশীল হওয়ায় আপনার কাছে আলোর গতির মান ধ্রুবক থাকছে না। একে নাকচ করতেই সময়ের ধীর হওয়া। উপরের কেইসে মনে হচ্ছে যে আলোর আপেক্ষিক বেগ কমে যাবে। এ কমে যাওয়া কে ব্যালেন্স করতে আপনার রেফারেন্স ফ্রেমের সময় এমন ভাবে স্লো হয় যেন আপনার কাছে যতক্ষণে ১ সেকেন্ড পূর্ণ হয়, সে সময়ের ভিতর আলো ২৯৯৭৯২৪৫৮ মি. কভার করে ফেলে!!!
একটু আগেই বলেছিলাম উদাহরণে, যে গতিশীল হলে এমন ঘটতে পারে যে আপনার ১ সেকেন্ড অতিবাহিত হতে বাহিরের ১.৭৭ সেকেন্ড লেগে গেল! এখানে একটা অতিরিক্ত .৭৭ সেকেন্ড রয়েছে। এই অতিরিক্ত সময়ে আলো তার ঘাটতি দুরত্ব অতিক্রম করে ফেলে, যেন আপনার কাছে মনে হয় আলোর গতি এক সেকেন্ডে C পরিমাণ ই হয়!
কাল দীর্ঘায়নে সূত্র হলো, t=t○/√(1- v²/c²)
এখানে t○ হলো ভেতরে কেটে যাওয়া সময়, t হলো যে রেফারেন্স ফ্রেমের সাপেক্ষে
গতিশীল সেখানে কেটে যাওয়া সময়, v হলো আপেক্ষিক বেগ ও c আলোর বেগ।
এই হইল গিয়া আমাদের গুটিভাজ ঘড়ির তুলকালাম খেলা!
থিওরী অফ রিলেটিভিটি : একটি গুটিবাজ ঘড়ি ও ধড়িবাজ মিটার-স্কেলের ইনফাইনাইট (পর্ব-২) 
থিওরী অফ রিলেটিভিটি : একটি গুটিবাজ ঘড়ি ও ধড়িবাজ মিটার-স্কেলের ইনফাইনাইট (পর্ব-৩)

Post a Comment

0 Comments